পোস্টগুলি

কদম

ছবি
তনুশ্রী তার বাবার বুকশেলফে হাত রেখে জীবনে প্রথমবারের মত নিজের পায়ে দাঁড়াল।  এক হাত বুকশেলফে রেখে আর অন্য হাত বাতাসে নেড়ে মুখ দিয়ে আনন্দধ্বনি করছে তনুশ্রী। আট মাসের বাচ্চা সে। কথা বলতে পারে না। মুখ দিয়ে কিছু অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করে। তবে শব্দগুলো খুব আদুরে। ও যখন গাগা-গুগু বলে মুখ দিয়ে লালা ঝরাতে ঝরাতে হামাগুড়ি দেয় তখন ইচ্ছে হয় ওর বলা শব্দগুলোকেও আদর করি।  তনুশ্রী খুব খুশি আজ। নিজের গোলগাল দুই পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। তার ছোট্ট গোলমুখের আনন্দ দেখে মনে হচ্ছে পারলে সে চিৎকার দিয়ে পুরো পৃথিবীকে বলবে - দেখ সবাই, আমি দাঁড়াতে পেরেছি! যেহেতু সে কথা বলতে পারে না তাই আপাতত গাগা-গুগু বলে আনন্দ প্রকাশ করছে।  তনুশ্রীর মা সোফায় হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন আর ভাবছেন বিমল কবে ঘরে ফিরবে। দু'মাস হয়ে গেল যুদ্ধ গেছেন উনি। এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদ এলো না। মনে মনে খুব অভিমান করছেন স্বামীর উপর আর বলছেন - অন্তত একটা চিঠি তো লেখতে পারে। কেমন আছে কোথায় আছে কি করছে এগুলি জানিয়ে ছোট্ট একটা চিঠি লেখতে কি সমস্যা তার? এত বিশাল যুদ্ধ করতে পারে আর একটা চিঠি লেখতে পারে না?  কিন্তু তনুশ্রীর মা জয়ীতা দেবী জান...

নৌকা এবং কয়েকটি তীব্র কল্পনা

ছবি
প্রিয় তিলোত্তমা, আমাদের কাঠের বাড়িটার সামনে একটা বিশাল হৃদ থাকবে ! সেখানে একটা মাঝারি আকৃতির একটা নৌকা সারাদিন ভেসে বেড়াবে। জ্যোৎস্নার সময়ে আমরা কবিতার বই হাতে নিয়ে হৃদের পাড়ে যাব। তুমি আলতা দেয়া লাল পা নৌকায় রাখতেই নৌকা কেঁপে উঠবে। সাথে সাথে হৃদের পানিতে থাকে চাঁদের আলোটাও, তাদের ঘুম ভাঙবে ! ওরা জানবে, কবিতা পড়ার সময় এসেছে রাতের নির্জনে ! ঘাসবনের জোনাকিরা সব জেগে উঠবে। ওরা পাখা নেড়ে সবুজ আলো জ্বেলে আমাদের হৃদের উপর ভেসে বেড়াবে। সবুজ আলোয় বাতাস কেঁপে উঠবে ! নাম না জানা ফুল ফুটবে জোস্নার আলোয়। সেই ফুল থেকে চাঁদের বাতাসের গন্ধ ভেসে আসবে ! এমন সময়ে - আমি তুমি নৌকায় গিয়ে বসব। তুমি শাড়ি ঠিক করে আয়েশ করে বসবে। আর জানোই তো, আমি তো অলস - শুয়ে পড়ব আমি, তোমার কোলে মাথা রেখে… এরপর হাতে নেব কবিতার বই। সুনীল, রুদ্র কিংবা রবীন্দ্র… বাতাসে নৌকা দুলবে তুমি মৃদু ভয়ে কেঁপে উঠব তোমার শাড়ির আঁচল এলো হবে জ্যোৎস্না এবং জোনাকির আলোয় বইয়ের পাতা উলটে আমি কবিতা পড়ব – তুমি শুনবে শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে আমার চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটবে তিলোত্তমা, তখন...

সৃষ্টির আলো

ছবি
বহুকিছু ভাবা হয়েছিল তোমাকে নিয়ে  বহুকাল ধরে বহুকিছু । শিশুর মত একটা মুখ, হাত দুটো পাশে রেখে মাথাটা উঁচু করে বোকা পাখির মত হাসে তখন ভাঙা খরগোশ দাঁত দেখা যায় ! কেনো যেনো মনে হয় ;  দাঁতটা ভাঙা বলেই হাসিটা এত বেশি প্রাঞ্জল আর মধুর ! তোমাকে স্বরবর্ণ শেখা বাচ্চা বললেও ভুল হবে না ! খুব আনন্দে থাকলে তুমি তো শিস বাজাও,  আবার খুব রাগ লাগলেও শুনেছি ! আচ্ছা, ভাঙা দাঁত দিয়ে শিস বাজাতে সমস্যা হয় না ? বাতাস ফেটে যায় না তো আবার !  ভাবলে অবাক লাগে ! প্রতিদিন রাত জেগে ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণকে জড়িয়ে  মনের ভাব লেখ নীল দেয়ালে, কখনওবা চাঁদের আলো দিয়ে বানানো স্বচ্ছ কাগজে !  রাত জাগো বলেই তো – আরে হ্যাঁ, তাইতো চোখের নীচে একটু কালি পড়েছে, একে বলা যাক চন্দ্রজাগা সময়ের চিহ্নকথা এই কালিটার আরও নাম দিয়েছি – চন্দ্রের বিপরীত কায়া, কখনওবা জ্যোৎস্নার ছায়া ! কত কিছু ভাবা হয়েছে আমার এই মগজে, ভাবতে পার ?        কিন্তু এটা ভাবা হয়নি        নিকোটিনও তোমার গোলাপ...

শব্দের ছবি [শৈশবের গল্প]

ছবি
শীর্ষেন্দুর গল্পসমগ্র পড়তে পড়তে ছোটকালের একটা বিচ্ছিন্ন সুখস্মৃতি মনে পড়ে গেল। সময়টা ছিল ২০০২ কিংবা ২০০৪ এর মাঝামাঝি সময়ের। তখন শুধু বই ধরতে জানতাম, পাতা ওলটাতে জানতাম, বইয়ের ছবি দেখে কল্পনা করতে জানতাম, কিন্তু পড়তে জানতাম না। বানান করতে পারতাম কয়েকটা শব্দ। কঠিন বানানগুলি একবার জেনে নিলে পরের বার থেকে সেই বানানের চেহারা বা ছবি দেখলে বানান না করেই বুঝতে পারতাম শব্দটা আসলে কি। ছোটকালে দেখেছিলাম মা প্রচুর বই পড়তেন। আমাকে ইংরেজি এলফাবেট দিয়ে শব্দ গঠন করতে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে মোটা মোটা উপন্যাস পড়তেন। তখন মাকে দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হত। এখন আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পসমগ্র পড়ছি। মায়ের প্রিয় লেখক ইনি। ছোটকালে মা আমাকে লেখকদের নাম বানান করে শিখিয়েছিলেন। কারণ এই নামগুলি চার/পাঁচ বছরের বাচ্চার জন্য কিছুটা কঠিন। যেমন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ! মা আমাকে বানান করে শিখিয়ে দিতেন কোন লেখকের নামের উচ্চারণ কি হবে। উচ্চারণ করতে পারতাম ঠিকই। কিন্তু বানান করতে কষ্ট হত। তাই আমি একটু বুদ্ধি ...

তিলোত্তমার আয়না

ছবি
এই যে তিলোত্তমা, হ্রদের জলে নিজেকে আর কতদিনই বা দেখতে পাবে ? যে হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে হয়তো কাল পরশুই  মরুভূমি হয়ে যাবে  নিটোল জলে ভরাট হ্রদটা । বলছিলাম কি যে, আয়নায় নিজেকে দেখতে শেখ। আয়না ধরতে শেখ। আগামী শরৎ-এ তোমার কাছে এলে একটা আয়না নিয়ে আসব, রুপোর প্রলেপ দেয়া। তিলোত্তমা, দিনে কয়বার হ্রদের জলে নিজেকে দেখ ? দুবার? তিনবার ? নাকি আরও বেশি ? বৃষ্টির দিনে কিভাবে দেখতে নিজেকে ? বৃষ্টির ফোঁটায় পানি কেঁপে উঠে বলে নিজের প্রতিচ্ছবিও ভূমিকম্পে রূপ নেয় ! তোমার পুরো পৃথিবী কেঁপে ওঠে ! বৃষ্টির দিনে কাঁপা পানিতে নিজেকে দেখে ভয় পাও কি তিলোত্তমা ? যে আয়নাটা তোমাকে দেব তা যেন না ভাঙে তাই নারকেলের খোসা দিয়ে বাঁধিয়ে দেব ! সাথে একটা শুকনো-শক্ত ডাল বেঁধে দেব, যেন সহজে হাতে ধরতে পার আয়নাটা ! এই আয়না কেমন ?  জান কিছু ?? এই আয়না কাঁপে না বৃষ্টি হলে এই আয়নায় মাছ থাকে না হাত ভেজায় না এই আয়নায় স্নান করা যায় না ডুব ও দেয়া যায় না এই আয়নায় তবে এই আয়নায় নিজেকে হুবহু দেখতে পাওয়া যায় তুমি যেমন, ঠিক তেমনি দেখতে পাবে এখানে নিজেকে আমার তিলোত্তমা ...

ফুসফুসে অক্সিজেন টেনে

ছবি
প্রায়ই বিকেল বেলার দিকে আমি আর তুমি টিএসসির দিকে হেঁটে বেড়াতাম।  নয়তো পাশাপাশি বসে থাকতাম। এমন ধরনের পরিবেশে তুমি প্রথমে চুপ থাকতে । প্রায় ঘণ্টাখানেক । তারপর দেশ, সমাজ রাজনীতি নিয়ে এক এক করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে মন থেকে। ওসব কথা আমার কাছে কঠিন লাগে। তাই আমি শুধু শুনে যেতাম। কিছু বুঝতাম না। মাথা নাড়তাম। হা – হু করতাম। তুমি অনর্গল বলে যেতে।  যদিও আমি কিছু বুঝতাম না তবে তোমার অভিব্যক্তি দেখে মনে হত যা বলছ তা সবই যুক্তিযুক্ত। এমনটাই হওয়া চাই। এসব কঠিন কথা বলা শেষ হলে তুমি কিছুক্ষণ বসে থাকতে চুপ হয়ে জোরে জোরে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য ফুসফুসে তাজা অক্সিজেন টেনে নিতে। আমিও তোমায় দেখে দেখে এই জঞ্জাল ভরা শহরে নতুন উদ্যমে বেঁচে থাকা ইচ্ছে খুঁজে পেতাম।    বছরখানেক হল তোমার সাথে টিএসসিতে বসে ওসব কঠিন আলাপ শোনা হয় না। বেঁচে থাকার জন্য ফুসফুসে অক্সিজেন টানা হয় না। চারদিকে আজকাল সব মন খারাপ করা ঘটনা ঘটছে তিলোত্তমা ! নিষ্পাপ মানুষকে মেরে ফেলছে, ছোটবাচ্চাগুলিকে মানুষরূপী জানোয়ারগুলি খুবলে খেয়ে ফেলছে ! এগুলি দেখে দেখে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছ...

তবুও আমি কান্না করি না

ছবি
বছরের কয়েকটা রাত এমন হয় যেন পৃথিবীর সব করুণ সুর সেই রাতে কানে ভেসে আসে। ঘুমানোর চেষ্টা করি , পারি না ! অতীতের সব করুণ স্মৃতি মনে পড়তে থাকে। পুরোটা দিন কত প্রাণবন্ত কাটে। হেসে খেলে। কিন্তু রাত হলে সব দিক থেকে করুণ সুর এসে জাপটে ধরে। বাতাসে দুঃখ ভেসে বেড়ায়। পানির টুপটাপ আওয়াজের মধ্যেও কেমন যেন করুণ সুর শুনতে পাই। একদম মন খারাপ হয়ে যায়। আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই অন্ধকারও আমাকে জাগিয়ে তোলে করুণ সুর শোনার জন্য। আমার মনে পড়ে যায় ঐন্দ্রিলার কথা। সবচেয়ে হাসিখুশি মেয়েটা কাউকে কিছু না বলে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে সেখানে ঝুলে পড়ল ! ঐন্দ্রিলা যখন বেঁচে ছিল তখন ও সবসময় লাফাত। দুষ্টামি করত। আমার নামটা খুব টেনে বলত – সৃইইইইইইষ্টিইইইইইইইইইই … এমন করুণ রাতে আমি সেই ডাকটা শুনতে পাই , তখন আমাকে চারদিক থেকে শূন্যতা ঘিরে ধরে। আমার দুই কান বন্ধ করে ফেলতে ইচ্ছে হয়। সাদা সাউন্ডবক্সে কিছু মিউজিক বাজতে থাকে। সাথে বৃষ্ট...