তবুও আমি কান্না করি না



বছরের কয়েকটা রাত এমন হয় যেন পৃথিবীর সব করুণ সুর সেই রাতে কানে ভেসে আসে।
ঘুমানোর চেষ্টা করি, পারি না ! অতীতের সব করুণ স্মৃতি মনে পড়তে থাকে।

পুরোটা দিন কত প্রাণবন্ত কাটে। হেসে খেলে।
কিন্তু রাত হলে সব দিক থেকে করুণ সুর এসে জাপটে ধরে। বাতাসে দুঃখ ভেসে বেড়ায়।

পানির টুপটাপ আওয়াজের মধ্যেও কেমন যেন করুণ সুর শুনতে পাই। একদম মন খারাপ হয়ে যায়।

আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই অন্ধকারও আমাকে জাগিয়ে তোলে করুণ সুর শোনার জন্য।

আমার মনে পড়ে যায় ঐন্দ্রিলার কথা। সবচেয়ে হাসিখুশি মেয়েটা কাউকে কিছু না বলে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে সেখানে ঝুলে পড়ল ! ঐন্দ্রিলা যখন বেঁচে ছিল তখন সবসময় লাফাত। দুষ্টামি করত। আমার নামটা খুব টেনে বলতসৃইইইইইইষ্টিইইইইইইইইইই
এমন করুণ রাতে আমি সেই ডাকটা শুনতে পাই, তখন আমাকে চারদিক থেকে শূন্যতা ঘিরে ধরে। আমার দুই কান বন্ধ করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
সাদা সাউন্ডবক্সে কিছু মিউজিক বাজতে থাকে। সাথে বৃষ্টির শব্দ !

উফ !
আমি আর শুনতে চাই না

আমি কান বন্ধ করে ফেললাম,
আমি আর কিছু শুনছি না।

তবুও,
কে যেন মাথার ভেতর করুণ সুরে ভায়োলিন বাজাচ্ছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।
আমি কান্না করতে চাই না। কিন্তু এই করুণ সুর আমাকে কান্না করতে বাধ্য করে।

তবুও,
আমি কাঁদি না

আমি জেগে থাকি,
জেগে রই
করুণ সুর শুনে অন্ধকারে বসে থাকি।

আমি কাঁদি না
আমি করুণ সুর শুনতে পাই রাতের গভীরে
হাজার মানুষের নিঃশব্দে কান্নার শব্দ আমি শুনতে পাই
ওদের দুঃখের বোঝা হালকা হয়, আর এদিকে আমার দুঃখের পাল্লা ভার হয়ে মাটিতে নুইয়ে পড়ে
তবুও আমি কাঁদি না
আমি জেগে রই
আমি জেগে থাকি করুণ রাতে
আমি করুণ সুর শুনতে থাকি

মৃতেরা আমার পাশে এসে দাঁড়ায়
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে
আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করে
কিন্তু
আমি ওদের কথা শুনতে পাই না

আমি করুণ সুর শুনি
তবুও আমি কাঁদি না
ওরা আমাকে কাঁদাতে চায়
তবুও আমি কাঁদি না
ওরা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে কাঁদাবার জন্য
তবুও আমি কাঁদি না

আমি রাতের অন্ধকারে করুণ সুর শুনতে পাই
আমি কাঁদি না
একসময় করুণ সুরকে আপন মনে হতে থাকে
আর মনে হতে পৃথিবীর সব সুখ এই করুণ সুরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে
শুধু আমি ধরতে পারছি না

আমি রাতের গভীরে করুণ সুর শুনতে পাই
তবুও আমি কাঁদি না
আমি হাসি

রাতের গভীরে করুণ সুর শুনে আমি হাসতে থাকি
কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করি আমি
চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই ঐন্দ্রিলা আমাদের ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়াচ্ছে
ঐন্দ্রিলা আমাদের ক্যাম্পাসে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে
ক্যাম্পাসে আর কেউ নেই, চারদিক অন্ধকার
ঐন্দ্রিলা একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে
একা একা
ভার্সিটিতে কেউ নেই
শুধু ঐন্দ্রিলা একা

আমি দেখতে পাই
ঐন্দ্রিলা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চারতলায় উঠছে
আমাকে ডাকে
আমিও ওর পিছু নেই
সেখানে গিয়ে দেখি ল্যাবে একা একা বসে আছে ঐন্দ্রিলা
সব কয়টা পিসি অন
আমাকে বলছেসৃইইইইইইইষ্টিইইইইইইই, আমাকে কোডিং করা শেখাবে না ?

আমি গিয়ে ওর পাশে বসি
কী-বোর্ডে হাত দেই, কোড করা শুরু
এক এক করে সব লাইন লেখতে থাকি
ঐন্দ্রিলা আমার দেখাদেখি কোড করতে থাকে
একসময় আমাকে ডাকে, বলেসৃষ্টি, শোন। এদিকে দেখ
আমি ওর দিকে তাকাই
তখন দেখি ঐন্দ্রিলার গলায় সেই ওড়নাটি ঝুলছে যে ওড়নায় সে ফাঁস দিয়েছিল নিজেকে

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হঠাৎ করেই হ-য-ব-র-ল [১]

মায়ের পেটে কাটানো দিনগুলিতে বই পড়া

দারুণ কিছু ক্ষমতা !