হঠাৎ করেই হ-য-ব-র-ল [১]
জানালা দিয়ে এত সুন্দর করে আকাশ দেখা যায়, এই ছবিটি না তুললে বুঝতামই না !
২০১৭ সালের ডিসেম্বর-এ তোলা, মায়ের ফোন দিয়ে ! চুপিচুপি করে !
|
- ১ -
মাথার ভেতর কে যেন একটি গরম ইট ঢুকিয়ে রেখেছে !
একই সাথে মাথা এত ভারী লাগছে - ব্যথা হচ্ছে - গরম ও লাগছে ! একেবারে বিশ্রী অবস্থা !
কোন কাজে মাথা যায় না, যায় শুধু নীচের দিকে, এতটাই ভার হয়ে আছে আমার মাথা !
বহু দিন কেটে গেল, লিখা হয় নি কিছু,
কিন্তু ভাবা হয়েছে অনেক কিছু ! সেগুলি ভাবার পড় কই গেছে, তার কোন ইয়াত্তাই নেই !
সে যাকগে, আমার লিখা হয়নি, কিন্তু স্কুল পড়ূয়া বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ঠিকই লিখে যাচ্ছে একে অপরকে ! কাল যে রাস্তায় একটি কাগজ পেয়েছিলাম ! তাতে লিখা, "আমাদের বাচ্চারা কেমন আছে?" কোন এক স্কুল পড়ুয়া বাচ্চার লিখা, গণিত খাতায় ! ভাষায় অপরিপক্বতার ছাপ আর তা অনেকটা বুলি আওড়ানোর মত অর্থাৎ যা বলা - না বলা দুটোই সমান ! দু-চারটা প্রেমের উপন্যাস পড়লেই তাতে এসব পাওয়া যায় !
যদিও তা বড্ড সস্তা, কিন্তু বাচ্চারা এসব পছন্দ করে, প্রিয়কে লিখার সময় তা মুখস্ত করা নামতার মত লিখে ফেলে !
লিখুক, সমস্যা নেই !
কিন্তু তাদের সৃজনশীলতা কি আকাশে উড়ে গেছে ?
বাচ্চা বয়সে লিখছে, তাই সৃজনশীলতা বৃষ্টির ফোঁটার মত সবখানে থাকা চাই, কিন্তু আছে ট্যাপের টুপ টুপ করে পড়া পানির মত, প্রতি দশ সেকেন্ডে এক ফোঁটা ! বড্ড গরীব রেসিপি !
- ২ -
এই যে, লিখে ফেললাম বেশ খানিকটা ! এখন মাথাটা বেশ হালকা লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন মাথার ভেতর একটি গ্যাস বেলুন গেঁথে দিয়েছে ! বেশ ভাল ! আরাম পাচ্ছি !
এই আরামকে আরও এক ফোঁটা রসিক করতে পা দুটো মেলে বসলাম, জলচৌকির পাশ দিয়ে !
বাইরে কে বা কারা যেন বেশ হট্টগোল করছে, কম বয়স তাদের, তা তো করবেই ! করুক ! আমার মত বয়স হলে তো আর পারবে না, তখন ক্লান্ত চোখ বন্ধ করে দার্শনিকতা করা হবে !
আজকাল আবার চোখের চশমাটিও ভারি লাগছে, মনে হয় যেন রেটিনা থেকে চশমাটি ঝুলছে ! আবার কখনওবা মনে হয়, চশমা তো নয়, যেন একটা বিশাল পাথর আমার নাকের ওপর বসে আছে ! বড্ড বেরসিক চশমা আমার !
- ৩ -
আমার মা কই ?
তিনিও আজকাল লিখেন, দু'চার লাইন পড়লে মনে হয় তিনি আরও লিখতে পারলে বর্তমানে অন্যদের মুখের মুখস্ত বুলি হতেন, যারা কিনা আমার মায়ের লিখা সম্পর্কে দু'তিন লাইন উক্তি করে গর্ব করে বেড়াতেন ! সমালোচনা করতে পেরে নিজেকে বিজ্ঞ ভাবতেন, পক্ষে কথা বলে নিজেকে সত্যের অনুসারী ভাবতেন ! আরও কত কিছুই না !
কিন্তু মা লিখেন কম ! পড়েন প্রচুর আর আমাকে শোনান আরও বেশি !
- ৪ -
এখন আমি আমার মেরুদণ্ড আর সোজা থাকতে পারছে না, কারণ মেরুদণ্ডের মেরুদণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ! আর মেরুদণ্ডের মেরুদণ্ড হচ্ছে মস্তিস্ক !
আমি যা বুঝলাম খুব ভাল করে, আমাকে শান্ত থাকতে হবে, ধীর হতে হবে, আস্তে আস্তে করতে হবে - যাই করি না কেন !
চঞ্চল হলে সব হারাতে হবে, যা নেই তা ও হারাতে হবে ! তখন নিজের সাথেই স্বার্থপরতা করা হবে ! সবই তখন দু'পয়সার কৌতুক হয়ে পড়বে ! আর এমন হতে দেয়ার অনুমতি দেয়া যাবে না ! একদমই না !
- ৫ -
আমিও লিখলাম, দু'ইঞ্চি হলুদ কাগজে ! লিখাতে আমার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে ! পড়ার পর ছিঁড়ে ফেলা হবে ! আমার সামনে ছেঁড়া হবে না, কারণ আমি কষ্ট পাব বেশি, দূরে ছেঁড়া হবে, তাতে কষ্ট কম, কিন্তু ছেঁড়া হবে, এটা নিশ্চিত !
এখনই কষ্ট পাওয়া শুরু হয়েছে !
এ যাত্রা ভয়ংকর, হুঁশিয়ার থাকতে হবে ! নইলে পা পিছলে মেঘের ওপর থেকে পৃথিবীতে পড়ে আবার অন্য কোথাও চলে যেতে হবে, চিরতরের জন্য ! আর তা আমি আর আমার প্রকৃতি, কেউ ই চাই না !
আমি আর পারছি না, আমার মস্তিস্কের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে, তাকে এখন বিছানায় শুইয়ে দেয়া দরকার ! নইলে আমার বাকি সবটারও ভেঙে পড়বে !