মায়ের পেটে কাটানো দিনগুলিতে বই পড়া
![]() |
১৯ বছর আগে আমাকে পৃথিবী নামিয়ে,
এখন নিজের বাগানে ফুল হয়ে...
|
তখন আমি বই-এর পাতা ওল্টানোর শব্দ পেতাম,
যখন আমি মায়ের পেটের ভেতর বসবাস করতাম !
তখন আমি একটা জিনিসই জানতাম !
আর তা হচ্ছে বই পড়া !
যদিও তখন আমি নিজে পড়তাম না,
মা পড়ত আর আমি কুন্ডলী পাকিয়ে মায়ের পেটের ভেতর আরাম করে শুয়ে-বসে দিন কাটাতাম !
তখন আমি বই-এর পাতার সুবাস পেতাম,
কারণ, মা নতুন বই কেনার পর ঘ্রাণ নিতেন !
আমিও পেতাম বৈকি !
দারুণ ছিল ঘ্রাণ গুলি !
মা যখন গল্পের বই পড়তেন,
তখন আমি পেটের ভেতর নড়ে উঠতাম !
শুয়ে থাকলে বসে পড়তাম !
মেরুদন্ড সোজা করে বসতাম !
খুব মনোযোগ নিয়ে আসতাম নিজের মধ্যে !
তারপর কান খাড়া করে মায়ের কণ্ঠ শুনতে থাকতাম !
গল্পের কাহিনীর সাথে সাথে মায়ের কণ্ঠস্বর-ও পরিবর্তন হত !
ফলে, গল্প সত্য বলে মনে হত – শুধুমাত্র মা-এর “কণ্ঠস্বর” এর কারণেই !
এই পৃথিবীতে ঘুমোনোর আগে আমি মায়ের পেটে বেশ লম্বা সময় ঘুমিয়েছিলাম !
আর তখনই -
রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎ, হেমচন্দ্র, বিভূতি, সুনীল, মানিক, হুমায়ূন, নজরুল, সেলিনা, জীবনানন্দ, রোকেয়া, জসীমউদ্দীন, সুকান্ত, সুকুমার, মধুসূদন, ওয়ালীউল্লাহ, সুফিয়া কামাল, প্রমথ, শহীদুল্লাহ, ওয়াজেদ, বনফুল, মোতাহের, মুজতবা, কবীর, জাহানারা ইমাম, হায়াৎ মাহমুদ, আব্দুল হাকীম, সত্যেন্দ্রনাথ, সিকান্দার আবু জাফর, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, কামাল চৌধুরী,
এঁনাদের লিখার আওয়াজ আনুভব করতে পেরেছিলাম !
শুধুমাত্র মা এর কারণেই,
উনি পড়তেন বলেই – আমিও না পড়েই পড়ে ফেলতাম !
মায়ের পেটে থাকতেই মা আমাকে এত দারুণ সুবিধে করে দিয়েছিলেন,
আরামে মায়ের পেটে শুয়ে-বসে থাকতাম আর মায়ের কণ্ঠস্বর থেকে গল্প শুনতাম !
দারুণ ছিল মায়ের পেটে কাটানো দিনগুলি !