আবার ভোরে ঝরা বকুল

চুপচাপ এক বিকেলে গুনগুন করতে থাকি - 

আজো তার পথ চেয়ে
ফেলে আসা তার গাঁয়ে
মা কাঁদে মুখ লুকিয়ে
সন্ধেবেলায় শাঁখ বাজে না তো আর
এতে আছে কী বলার
আজও কেউ জানে না তো
কোথায় সে হয়েছে নিখোঁজ


একটু বড় হয়েছি বয়স কুড়ি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছি  
মাঝেমধ্যেই হুটহাট করেই স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধুবীদের কথা মনে পড়ে যায় যাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল, তারা তো আছেই প্রায়ই দেখা সাক্ষাৎ ঘটে ওদের সাথে। তবে আমার খুব বেশি মনে পড়ে তাদের কথা, যাদের সাথে খুব সুন্দর একটা বন্ধুত্ব হতে যেয়েও হয়ে উঠল না

যখন এদের কথা মনে পড়ে তখন সব ছেড়ে দিয়ে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকিআমি এগিয়ে যাইনি বন্ধুত্বের জন্য নাকি ওরাই তাদের চারপাশে বিশাল বিশাল সব অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছিল নাকি তারা আমার দিকে ঠিকই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিল কিন্তু আমি দেখতে পাইনি ?! হয়তোবা আমার চালচলনে বন্ধুত্বসুলভ ভাবটা ছিল না

স্কুলে থাকতে প্রায়ই শুনতামসৃষ্টির অনেক ভাব অনেক মুড নিয়ে চলফেরা করে ছেলেটা
আমি মনে মনে বলতাম - আরে পোলাপান, আমি চুপচাপ থাকি আর কথা কম বলি দেখে এরা আমাকে মুডি বল ক্যান ? আমি তোমাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম ঠিকই কিন্তু আমি যে পরিমাণ ইনট্রোভার্ট ! বাপরে বাপ !  

রমজান, ঈদ বা বিভিন্ন ছুটিতে যখন এদিকে ফিরে আসি, নিজের পুরনো স্কুল কলেজের দিকে তখন অনেকের সাথেই দেখা হয়ে যায় কথা হয় একসাথে বসে দু/তিন কাপ চা খাওয়া হয়ে যায় ! বিভিন্ন জিনিস কথা হয় কথা শেষে ভুল করে জিজ্ঞেস করে ফেলতে মন চায়কাল ইশকুলে কার কার ক্লাস আছে রে ?

কিন্তু করা হয় না, কারণ বয়স কুড়ি, পড়ি ভার্সিটিতে





ইশকুলে আমরা একসাথে পাঁচ বছর পড়ি ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেন এই বিশাল সময়ে আমরা বিশাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে তুলি

২০১৫ তে ইশকুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে ভর্তি হই সেখানে আমরা সবাই ছিলাম সেই একই ছেলেমেয়েরা নতুন করে আরও কয়েকজনকে ভর্তি নেয়া হয় এক/দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই তারা আমাদের সেই বিশাল বন্ধুত্বের অংশ হয়ে যায় ২০১৭ এর মে মাস পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম এরপর তো এডমিশন তারপর ভার্সিটি নামক দুই ঝড় আমাদেরকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফেলে আসল আমরা আলাদা হয়ে পড়লাম এই ঝড়ে কারো কারো স্বপ্ন পূরণ হল আর কেউ কেউ হল সর্বহারা

এই ঝড় আসার আগে যাদের স্বপ্ন পূরণ নিয়ে আমরা নিশ্চিত ছিলাম তাদের অনেকেরটাই ভেঙে গেল আর যাদের নিয়ে আমরা কিছুই ভাবিনি তারা বিশাল স্বপ্নের ডানা মেলে আকাশে উড়তে লাগল

খুবই বিদঘুটে ব্যাপার এইএডমিশন” ! কেউ কেউ ভেসে বেড়ায় মহাবিশ্ব থেকে মহাবিশ্বে কেউবা ডুবে মরে

এত ঝড়ের পরও ওদের মধ্যে যাদের সাথে আমার খুব ভাব ছিল তাদের অনেকের সাথেই আমার ভাবটা জমে আছে, এখনও, এই সময়ে এসেও কারো সাথে হয়তো বন্ধুত্বের প্রবাহটা একটু কমে গেছে কেউ কেউ হয়তো একদম চেঞ্জ হয়ে গেছে, খুব ফর্মাল হয়ে কথা বলছে আজব লাগে বন্ধুত্বে আবার কিসের ফর্মাল এখানে যদি আমরা একজনকে অপরের সামনে মেলে ধরতে না পারি তাহলে কিসের বন্ধুত্ব ?! কাউকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিলে আমি বরাবরই নিজেকে মেলে ধরি, এক্ষেত্রে সেও যদি নিজেকে মেলে ধরে তবে বন্ধুতেটা টিকে যায় নইলে আমি সরে আসি

এবারের রমজানের ইফতার মাহফিলে অনেকজন এসছিল সবাইকে শুরুতে দেখে আমি একদম কেন যেন হয়ে গেলাম ঠিক বুঝতে পারলাম না ওদের কেউ কেউ একদম একই আছে কেউ কেউ আউটলুক চেঞ্জ করে একদম অন্য কেউ হয়ে গেছে ভেতরে বাইরে উভয় দিকে চেঞ্জ !
খুব কথা বলতে মন চাচ্ছিল স্কুল-কলেজের জমানো অনেক কথা তাছাড়াও গত দুবছরে না দেখা হওয়ার কারণেও অনেক কথা জমা হয়েছে কথার ঝুলিতে


এইতো, এদের এক একজনকে করে ধরে আমি হাজারটা গল্প বলে ফেলতে পারব

ওরা কি পারবে আমাকে নিয়ে গল্প করতে ?! 

আমি কিন্তু সবাইকে নিয়েই ভাবি ! কেউ আমার চোখ এড়িয়ে যায় না  

একটা ব্যাপার বারবার আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছিলএক একজনকে দেখে কত কি মনে পড়ে যায় ! কত কি বলে ফেলতে মন চায় প্রতিজনকে নিয়ে আমার মনে কত যে গল্প তৈরী হয়েছে যাদের সাথে কখনো ঠিকমত কথা হয়নি এমনকি তাদের নিয়েও আমার গল্পের শেষ নেই ! আমি জানি ওদেরও অনেক গল্প জমা আছে । ওদের চোখের দিকে তাকালে ব্যাপারটা দিঘীর স্বচ্ছ জলের মত বোঝা যায় ! 

কিন্তু কেউ শান্ত হয়ে বসে না গল্প শোনার জন্য

সবাই কেন যেন কিসের জন্য খালি ছুটোছুটি করে এই কুড়ি বছর বয়সে ! সবাই এখন বড় হয়ে গেছে ইশকুলের সেই ছোট্টটি আর নেই কেউ !

চুপচাপ এক সকালে গুনগুন করতে থাকি - 

জানি সে কোথায়

এই শহরের কোন বাগানে
সে হয়ে আছে ফুল
প্রতি সন্ধ্যায় পাপড়ি মেলে দিয়ে
সে আবার ভোরে ঝরা বকুল

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হঠাৎ করেই হ-য-ব-র-ল [১]

মায়ের পেটে কাটানো দিনগুলিতে বই পড়া

দারুণ কিছু ক্ষমতা !