তীব্র ইচ্ছে



আজকে এই মুহুর্তে যেমন করে বৃষ্টি পড়ছে, আহা নাপড়ছে না তো ! বাতাসে বৃষ্টি ভেসে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখির শাদা পালকের মত আমার অনেক দিনের তীব্র ইচ্ছা এমন পরিবেশে আপনার সাথে ঘুরে বেড়ানো, হেঁটে বেড়ানো ! কথা বলে অথবা না বলে হয় রমনায়, না হয় কার্জনে, না হয় বৃষ্টিভেজা যে কোন কালো রাস্তায়, বা অন্য কোথাও যেখানে মানুষ কেন দেবতাও কখনো যায়নি !

সেখানে মাঝে মধ্যে পাখির ডাক শোনা যাবে, হয় কোকিলের না হয় টিয়ার না হয় অন্য কোনো পাখির ! সামনে দিয়ে একটা বা দুইটা পাখি উড়ে যাবে, আমরা তাকায় থাকব সেই দিকে, তবে পাখির নাম জানব না ! কেউ কাউকে জিজ্ঞেসও করব না, “পাখির নামটা জানেন ?” 

না জানা জিনিস দেখতেও কেমন যেন ভাল লাগে !

এমন কোন জায়গা- যেখানে প্রচুর ফুল আছে গাছেও ফুলরাস্তায় ফুলঘাসের উপরও ফুল ! রঙিন ফুল ছাড়াও একটা নীল আকাশ তো থাকবেই তাতে মেঘ থাকবে এমনভাবে যেন সেগুলিকে গোনা যায় আলাদাভাবে সেদিন অনেক চেষ্টা করেছিলাম মেঘ গোনার তবে হয়নি কেমন যেন বারবার মিশে যাচ্ছিল একটার সাথে আরেকটা সেদিন মেঘ গুণতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল, ঐন্দ্রিলাটা এত কম সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল




বাতাসে ভাসতে থাকা বৃষ্টি আমার চশমার কাঁচে জমাট বাঁধবে আমি ঝাপসা দেখা শুরু করব এই পৃথিবী ! আপনাকেও দেখতে পাব না তখন তবে আপনি আমার চোখের দিকে তাকালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পানিতে রংধনু দেখতে পাবেন !

আচ্ছা, আমি কি রংধনু দেখতে পাব চশমার কাঁচে ? এর আগেও বেশ কয়েকবার বৃষ্টির বিন্দু জমাট বেঁধেছিল এতে, তবে রংধনু দেখেছিলাম কিনা তা মনে করতে পারছি না ! আপনার কি মনে হয় ? দেখতে পাব কি পাব না ?!

তবে কাঁচে বৃষ্টির বিন্দু জমলে আপনার দেখা পাব কিন্তু বাস্তবিক অর্থে পাব না ! ব্যাপারটা ভাবতে কেমন যেন লাগে !

আপনি হয়তো চাইবেন আপনার কাছে থাকা রুমাল দিয়ে আমার চশমার গ্লাস মুছে দিতে, তবে আমি বলব, “থাকুক না, রঙধনুর চশমা দিয়ে আপনাকে দেখি !”

আজকের মূল সৌন্দর্য বৃষ্টিটা ! যেভাবে করে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শিমুল তুলা কিম্বা তুষারের মত, আমি অবাক না হয়ে পারি না ! আমাকে অবাক হতেই হয় এবং তীব্রভাবেই হতে হয় ! এবং আবারো অবাক হতে হয়
একটা চক্রের মত করে অবাক হতে থাকি আমি

আমি প্রায়ই অবাক হই, জোরালোভাবেই অবাক হই ! তবে তা একবারই ! সেখানে আমি চক্রাকারে ঘুরতে থাকি না ! জন্ম নেই একবার । মরে যাই, বেঁচে থাকি না ! শ্বাস নেই না এক জীবনের বেশি 

তবে আজকের অবাক হওয়াটা এখানে মৃত্যুর মুখ না দেখেই আমি হাজারবার জন্মাই হাজার বছর ধরে ! আর কাঠগোলাপে চড়ে মহাশূন্যে যাই

সাক্ষাৎ-এর ইচ্ছেটা এতই তীব্র যে এটা নিয়ে ভাবলে আমি কেমন যেন আনন্দে ছটফট করি ! এলোমেলো হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে চাই নিয়ম ভেঙে আরও কিছু লেখা লেখে ফেলতে মন চায়, বারণ করা কথাগুলি বলে ফেলতে মন চায় ! যে কথা বলব না বলে সেদিন পুকুর পাড়ে নিস্তব্ধতার সাথে শপথ করেছিলাম - সে কথাগুলি চিৎকার দিয়ে বলতে মন চায় যেন গাছের সবকটা পাতা নড়ে ওঠে, সব পাখির ঘুম ভেঙে যায় !

আমি যে ভাব নিয়ে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে বসে আছি তা আমি কখনোই প্রকাশ করতে পারব না, হাজার বছর ধরে কাগজ কলম নিয়ে বসে থাকলেও আমাকে দিয়ে তা হবে না !
তবে আপাতত এতটুকু বলে ফেলতে কষ্ট করতে হচ্ছে না - আপনার সাথে আজকের এই মুহুর্তে এই ধরণের সাক্ষাতের ইচ্ছে তীব্র এবং নদীর জলের মত কিম্বা ফুলের কলির গর্ভে থাকা অন্ধকারের মত খুব গভীরভাবেই তীব্র !


কিছুকিছু সুর মাঝেমধ্যে এমনভাবে আমাকে পেছন থেকে ডাকে যেন মনে হয় বলতে চাচ্ছে, “এই যে, আমাকেই খুঁজছ, আমি তোমার পিছেই আছি ! একটু হাত বাড়ালেই ধরতে পারবে তবে আমি হাত বাড়াই না, ওদিকে যাই না, তাকাই না, মাথা নীচু করে থাকি কে যেন আমাকে মাথা নিচু করে থাকতে বলে জানি না কে ?! ওরা আমকে মানা করে !

আমার মনে হয়, আজকেও আমাকে মানা করছে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার তীব্র ইচ্ছাকে ! আমি জানি না কেন ওরা সবসময় আমার তীব্র ইচ্ছেগুলিকেই মানা করে


তবে এই প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজি না !

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হঠাৎ করেই হ-য-ব-র-ল [১]

মায়ের পেটে কাটানো দিনগুলিতে বই পড়া

দারুণ কিছু ক্ষমতা !