আজকাল আমি কেমন আছি, কেউ এসে দেখে যা !
একদম
আলাদা হয়ে গেছি নিজের আগের নিজ থেকে । যেন
আমি আর নেই ।
যা ছিল আমার মধ্যে, সব ধুয়ে গেছে
জলে ! আমার মধ্যে কিছুই নেই ! আমার মধ্যে আমিও নেই !
আজকাল
আমি কেমন আছি, কেউ এসে দেখে যা ।
দরজাটা
কিন্তু খোলাই থাকে, ৩৬৫ দিন, এমনকি ৩৬৬ দিন হলেও, কিন্তু কেউ আসে না, কেউ এসে দেখে যায় না আমি কেমন
আছি !
আমি
সবসময় উত্তর দেয়ার জন্যে ঠোঁটের আগায় উত্তর জমিয়ে রাখি, যেন কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করে, 'কেমন আছিস রে আজকাল' তার
যেন উত্তর দিতে পারি !
কিন্তু
কেউ আসে না, কেউ এসে দেখে যায় না আমি কেমন
আছি ?!
আমি
যে আর আগের মত
মানুষ নই, তা কেউ জানতে
পায় না !
আমি
হাসি, আমি কাঁদি, আমি চুপ করে বসে থাকি দিনের আকাশের দিকে তাকিয়ে, নিঃশব্দে
হেঁটে বেড়াই কালো মাটিকে চোখ দিয়ে কামড়ে যেন মাটি আঘাত না পায়,
সব
হারিয়ে এই সাত বাই
আট ফুট রুমের চিকন বিছানায় এসে শুয়ে থাকি, জানলা দিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করি, কিন্তু পাই না, চাঁদটাও না তারাগুলিও না
! শহরের আলোয় রাতের আকাশ আজ অবশ আকাশ
।
সব
ভুলে পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমের দেশে যাওয়ার চেষ্টা করি, চলেও যাই !
কিন্তু
হঠাৎ ঘুম ভেঙে চোখের কণা স্পর্শ করে উষ্ণ জলের সন্ধান পাই ! তাহলে
কি স্বপ্নে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, 'তুই কেমন আছিস সৃষ্টি, বল আমাকে, আজ
সব শুনব তোর, তুই শুধু বলে যা' !
জানিনা,
স্বপ্নে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল কিনা ! তবে বাস্তবে আমাকে কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস
করলে কেঁদে ফেলব !
আনন্দের
কান্না, অবাক হওয়ার কান্না, অন্তত কেউ তাহলে আছেও যে জানতে যায়
আমি কেমন আছি ! যদিও তা স্বপ্নে, তবুও তো কেউ আছে জিজ্ঞেস করার জন্যে !
এই
ছোট রুমে এক বিন্দু সমুদ্র
আছে, ২৮ টা মাছ
সেখানে দিনরাত সাঁতার কেটে বেড়ায় ! রাত হলে ওরা পানিতে ভেসে ভেসে ঘুমায় । ওদের ঘুম
দেখার জন্য পাশে নীল একটা বাতি জালিয়ে রাখি !
দেখি,
ওরা ঘুমাচ্ছে, মাঝে মধ্যে পাখা ঝাপটাচ্ছে, উপরে উঠে বাতাস ভরে নিচ্ছে ! মাছগুলো ঘুমায়, মাছগুলোর ঘুম দেখে আমার ও ঘুম পায়
! নিজেকে এই এক বিন্দু
সাগরের ভেতর কল্পনা করে ঘুমিয়ে পড়ি !
আমি
কান্না করে অশ্রুকে সাগরে ফেলি, কেউ জানতেও পায় না !
মাঝে
মধ্যে আমার খুব কথা বলতে মন চায়, শোনার
জন্য কেউ থাকে না, তাই বলাও হয় না !
তবুও
আমি বলতে চাই, কথা বলতে চাই, চিৎকার দিয়ে সব বলে ফেলতে
চাই ! কেউ শুনুক আর না শুনুক,
আমি কথা বলতে চাই !
মাঝে
মধ্যে আমার কথাগুলোকে হাজার মানুষকে শোনাতে চাই, জানি - কেউ শুনত না, শুনে না, শুনবেও না ! তবুও কেন যেন আমি শোনাতে চাই !
রুমটা
অন্ধকার করে ছোট টেবিল ল্যাম্পের উপর নীল রুমাল রেখে একটা ঘোর লাগা পরিবেশ সৃষ্টি করি ।
ল্যাপটপ
খুলে বসি, লেখতে থাকি লেখতে থাকি, থামি না ! কীবোর্ড ক্ষয় হয়ে যায়, আঙুল ঝিমিয়ে পড়ে, তবুও আমার কথা থামে না, লেখা থামে না ! চলতেই থাকে...
চার্জের
অভাবে এলসিডির আলো ঘনিয়ে আসে ঢাকার রাতের আকাশের মত ! তবুও
আমার কথা যেন ফুরায় না !
একসময়
এলসিডি কোনরকম ঘোষণা না দিয়েই বন্ধ
হয়ে যায় । তখন কাগজ-কলম নিয়ে বসি, জানি কেউ পড়বে না, তবুও লেখি !
আর
লেখার পর ছিঁড়ে চারতলার
জানলা দিয়ে বাতাসে ছেড়ে দেই । আর কাগজের
টুকরোগুলি এই রাতের শহরের
অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে ! আমার কথা গুলো পুরো শহরের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায় !
কত
ভাবেই তো বলতে চাই,
আমি কেমন আছি !
তবুও
কেউ জিজ্ঞেস করে না, কেউ এসে দেখে যায় না, কেউ এসে মাথায় হাত রাখে না, কেউ কিছু বলে না, দরজাটা কিন্তু খোলাই থাকে, ৩৬৫ দিন এমনকি ৩৬৬ দিন'ও !
'কেমন
আছিস সৃষ্টি, বল না, আজ
সব শুনব কিন্তু' !
কেউ
বলে না ! কেউ উঁকি দিয়ে দেখে যায় না আমার জীবন
টা !