সোডিয়ামে ভেজা রাস্তাগুলি
এই রাস্তাগুলি মাঝে মধ্যে আনন্দে ভরে যায় ।
কয়েক
জন ঝিম মেরে বসে থাকে, মিনমিন করে কথা বলে ! হঠাৎ করেই একজন ঝড় হয়ে এসে
তাদের ঝিম ভেঙে দেয়, মিনমিন করা মানুষগুলি এবার একটু নড়েচড়ে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে ! হেসে হেসে কথা বলে, নিজের গল্পগুলিকে গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে, জীবন্ত হতে দেখে !
সূর্য
ডোবে, সন্ধ্যা হয়, সোডিয়াম বাতি জ্বলে ওঠে !
নতুন
কয়েকজন এসে যোগ দেয় । মোটা স্বরে
গল্পের পরিমাণ বাড়তে থাকে ।
কেউবা
গান করা শুরু করে দেয়, বাদ্যযন্ত্র হিসেবে জায়গা পায় বোতল, টিফিন বক্স অথবা জিন্সে ঠাসানো শক্ত পা !
কয়েকটা
টোকাই এসে যোগ দেয়, তাঁরা গানের লিরিক্স জানে না বুঝেও না
! তবুও গানের সাথে সাথে মাথা দোলায়, হাতে থাকা এলুমিনিয়ামের থালায় আঙুল দিয়ে সুর তোলে !
রাত
গভীর হতে থাকে, তাদের ঘুম পায় ! রাস্তায় রিক্সা কমতে থাকে, গাড়ির দেখা পাওয়া যায় না, দূরের কোথাও সবজি পৌঁছানোর ট্রাকগুলি নিয়ন জালানো পথে বৃদ্ধের মত ধীরগতিতে চলতে থাকে
!
বাড়ির
কর্তারা এখন পথিক, হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যায় । কারো হাতে
থাকে পাঁচ বছর মেয়েটির জন্য ফ্রক ! নতুবা মায়ের জন্যে কেনা টাঙ্গাইলের শাড়ি, হয়তোবা পঁয়ত্রিশতম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য লাল প্যাকেটে মোড়ানো উপহার !
এমনও হতে
পারে, দিন পনেরর আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকা ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার জন্যে কেনা প্রিয় মিষ্টির পাশাপাশি নিজের জন্যে কেনা একটা বই !
পথিক
কর্তাদের হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ নিয়ে আন্দাজ করা মুশকিল ! মানবজীবনের যে কোন কিছুই
থাকতে পারে হাতে ধরা ব্যাগটিতে !
আকাশে
তারার সংখ্যা বাড়তে থাকে, বাতাসে অজানা ফুলের সুবাস দৌড়ে বেড়ায়, কেউ হয়তোবা শেষ সিগ্রেট জ্বালানর প্রস্তুতি নিতে যেয়েও নেয় না, বুকপকেটে ভরে রাখে, সূর্য ওঠার সময় কুয়াশায় সিগ্রেটের ধোঁয়া মিশিয়ে দিবে বলে !
আর
এদিকে, রোডলাইট থেকে সোডিয়াম বৃষ্টির মত ঝরতে থাকে
রাস্তার উপর ! শুকনো আলকাতরাকে ভিজিয়ে একাকার করে দেয় !
সোডিয়ামে
ভেজা রাস্তাগুলি অপেক্ষা করতে থাকে সূর্য ওঠার...
