কুয়াশা রংধনু
স্বপ্ন
পেয়েছিলাম তার দেখা,
স্বপনে – কল্পনায় – সবখানেই !
তবে বাস্তবে নয় !
স্বপনে সে সমুদ্রের রঙিন মাছের মত ;
রঙের মায়ায় জলে বিভ্রম সৃষ্টি করে !
আর কল্পনায় ?!
থাক, তা আর বললাম না !
কারণ,
স্বপন হচ্ছে প্রকৃতির ; স্বইচ্ছা খাটে না
কিন্তু কল্পনা আমার ; নিজের চিন্তার তুলিতে আঁকা
আর সেখানে তাকে আমি আমার মত করে পাই !
তাই স্বপনে থাকি না ; রই কল্পনায় তার সনে !
পদ্মপাতা
জানতে
তুমি – আমি যে পদ্মপাতা;
আরও
জানতে – সেখানে
জলবিন্দু
থাকে না বেশিক্ষণ,
তাই
তুমি থাকলে না সেই বিন্দু হয়ে;
জলবিন্দু
থেকে রূপান্তর হলে জলাধারে -
যেখানে
পদ্মপাতা
হয়ে ভেসে বেড়াই তোমারই মনের ধারে !
সুপ্ত – সুপ্তি
খুব
যে রাত হয়েছে –
জোনাকিরাও
গেছে ঘুমিয়ে –
জ্বলে
না আর ঐ লুসিফারেনের সবুজ বাতি;
তবুও
এমন সময়ে,
আমি
নই সুপ্ত – তুমিও নও সুপ্তি !
নামহারা
ফুল
হুটহাট
করেই দেখতে পাই শাদা একটি পাপড়িকে –
ভিড়ের
মধ্যে মাথা উঁচু করে উড়ে বেড়াচ্ছে;
দেখতে
প্যারাসুটের
মত, বীজ বহন করে চলে;
হঠাৎ
করেই মনে হয় –
এ
যেন কোনো গাছের বীজ নয়, সহসা মানব ইচ্ছের বীজ !
নাম
হয় না মানব ইচ্ছগুলির, সেগুলি শুধুই ইচ্ছে !
আর
তাই পাপড়িটাও –
নামহারা
ফুলের নামহারা ইচ্ছে !
ভালোবাসা
চায়ের কাপে মন রেখে;
কুয়াশায় ঠোঁট ভিজিয়ে;
চোখের পাপড়িতে শিশির বিন্দু জমিয়ে; ভালবাস
আমাকে নয়, নিজেকে
!
নিমগ্ন
চায়ের কাপ ; শীতের সকাল !
চায়ের বাষ্প ; শীতের কুয়াশা !
বোঝা যায় না – কোনটা কুয়াশা ; কোনটা বাষ্প !
দুটো মিলে একাকার ;
এভাবে নিমগ্ন হব কি আমরা কখনোও ?!
আবেগ
খুব করে আবেগ দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম –
“কুয়াশায় ঠোঁট ভিজিয়ে
আমার শিশির ভেজা চিবুকে কবে চুমু খাচ্ছ ?
অয়োময়
তবে,
ভুলেই তো গিয়েছিলাম –
তুমি তো অয়োময়;
যে কিনা কুয়াশা এবং চায়ের বাষ্পের পার্থক্য করতে জানে না
!
লেখাপড়া এবং স্যার
স্যার বলেন,
পড়ালেখা করলে প্রকৃতির সবটা জানতে পারবি;
অজানা থাকবে না কিছুই !
শীতের সময়ে বলা কথাগুলি –
কেন কুয়াশা হয়ে অজানার দিকে উড়ে চলে যায় – তাও জানবি !
মন
মানুষ চাইল –
সে তার মনকে উড়ে যেতে দেবে না যার-তার কাছে ; রাখবে বেঁধে
!
কুয়াশা দিয়ে বানালো একটি দড়ি ;
তা দিয়ে রাখলো বেঁধে মনকে !
ছায়া
যখন তোমার আর সূর্যের মাঝে শাদা মেঘ থাকে ;
তখন তোমার আর মেঘের মাঝে নতুন এক অতিথি হিসেবে ছায়া থাকে
!
ঝড়
যখন শীতের রাতে তোমার কথা মনে পড়ে ;
জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়াই ;
উন্মুক্ত করে দেই শরীরের সবকটা রন্ধ্রকে ;
নিঃশব্দে কুয়াশা প্রবেশ করে রক্তে ;
গরম রক্তে শীতল কুয়াশা ঝড় তোলে
এক এক করে অবশ করে দেয় প্রতিটা রক্তের টুকরোকে
অবশেষে তোমাকে ভাবার জন্য আমার কোনো ভাবনা সজাগ থাকে না !
দূরভাগ্য
ভাগ্য ভাল – ভাগ্য খারাপ !
সবই কিনা ভাগ্যের ছেলেখেলে ;
তবে, একটু রসিকতা করা যাক –
ভাগ্যকে তাড়িয়ে দেই ;
দূর হ ভাগ্য ;
তুই একটা দূরভাগ্য !
হতাশা
খাঁচার ভেতর একটা পাখি ছিল নাকি ;
ধূসর তার রঙ !
কি মনে করে খাঁচাটা একদিন কুয়াশা হয়ে উড়ে গেল !
আর ধূসর পাখিটা নীল আকাশে !
পরে জানা গেল -
যখন সে খাঁচায় ছিল ; নাম ছিল তার হতাশা !
যখন আকাশে এলো ; নাম হল তার আনন্দ !
কিন্তু,
খাঁচাটির কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না,
শেকলের ঠিকানা না জানাই উত্তম !
মায়াবতী
নাহ,
হলো না বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা !
সারাদিনের হৈচৈ শেষে ঝগড়ুটে তুমি যখন ক্লান্ত –
তখন এক অপরূপ মায়া তৈরী বাস করছিল –
তোমার চোখের মণিতে,
ফর্সা গালের সবুজ রগটিতে – যা দিয়ে লাল রক্ত হেঁটে চলে
;
ঠোঁটের বাম কোণায়, যেখানে ভোরের আলোয় মধু লেগে থাকে !
এই সবকটি মিলিয়ে যা একখানা মায়া তৈরী করে ;
তখন মনে মনে বলেই ফেলি -
আর হলো না রাগ করা – এই ক্লান্ত মায়াবতীর সাথে !
কদলী
আহা ! চিনলে না কদলী মশাইকে ?!
পরিচয় দিচ্ছি, মন দিয়ে শোনো –
শীত – গ্রীষ্ম – কি বর্ষা !
সব সময় হলুদ রঙের শাল পেঁচিয়ে রাখে শাদা রঙের বুড়োটা
আরে দাদা, কলা মশাইয়ের কথা বলাছিলাম যে !
বাস্তুহারা
কি বললে জয়ীতা !
ওরা বাস্তুহারা ?!
কিন্তু বেঁচে থাকতে খুব বেশি কিছু লাগে না
একটা পৃথিবী হলেই যথেষ্ঠ !
ভ্যারাভ্যারা
যেদিন জানতে পারলাম –
এই দুনিয়া অনেক বড় ;
আরও বড় এই মহাবিশ্ব ;
সেদিন থেকেই জানা ব্যাপারগুলিকে মনে হওয়া শুরু হল –
ভ্যারাভ্যারা !
বিদ্যুৎ বিভ্রাট
ভুল বললে জয়ীতা !
তোমার চলে যাওয়ার পর থেকে –
অমানুষ আমি !
কেউ আসে না !
এমনকি ইলেকট্রনগুলিও না !
আর তুমি কিনা বলো একে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ;
বাহ জয়ীতা,
আমার কষ্ট নিয়েও তোমার রসিকতার শেষ নেই !
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
তোমার কথামতোই সব করেছি জয়ীতা –
শবযাত্রার পূর্বে শিশিরবিন্দু দিয়ে তোমার কোমল শরীরকে স্নান
করিয়েছি !
কাঠগোলাপের বিশাল একটি পাপড়ি দিয়ে তোমার ফর্সা দেহ পেঁচিয়ে
শ্বশানে দিয়ে এসেছি !
তারপর ;
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভেবেছি –
তুমি বেঁচে নেই ; পৃথিবীও বেঁচে নেই !
তবে কি এই পৃথিবীকেও শিশির আর কাঠগোলাপ দিয়ে শেষ করব তোমাকে
যেভাবে শেষ করেছি ?!
প্রত্যুৎপন্নমতি
কবিতা লেখা শুরু হয়েছিল তোমাকে নিয়েই !
আমি লেখতাম, তুমি পড়তে, কিছু বলতে না,
তবে তোমার চোখে-মুখে ফুটে উঠত কবিতার কথাগুলি
কিন্তু যেদিন জানতে পারলে –
কবিতা লেখা ছাড়া পয়সা কামাই এর কোনো ক্ষমতা নেই আমার ;
সেদিন চলে গেলে
একেই কি বলে প্রত্যুৎপন্নমতি !
শৈশব
শৈশব মানে নিশ্চিন্ত ;
আমার জীবনে তা এসেছিল দুবার !
একবার শৈশবেই শৈশব এসেছিল,
পরের বার ‘তার’ উপস্থিতিতে
প্রথম শৈশব ছিল আলোর তৈরী ;
দ্বিতীয় শৈশবে এসে আগুনকে আলো ভেবে ভুল করেছি ;
শৈশব ভুলে পুড়েছি তাতে আমার সবটা যৌবন নিয়ে !